রোযা রেখে দিনের বেলায় রিকশা চালাতে পারেন না শামীম। তাই ইফতারের পর বের হন জীবিকার উদ্দেশ্যে। রাতে রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তাতে স্ত্রী, তিন মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার চলে কোনোমতে। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবারও রিকশা নিয়ে বের হন। তবে তাকে ঘরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
জানা যায়, রাত দেড়টার দিকে ইউটার্ন নেওয়ার সময় টহল পুলিশ তাকে থামিয়ে ‘মহাসড়কে ওঠার অপরাধে’ ১ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে রাতভর আয়ের ৬০০ টাকা ও পকেটে থাকা আরও ১০০ টাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে খালি হাতে বাড়িতে ফেরেন শামীম।
শামীমের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গাড়াজান পন্ডিতপাড়া গ্রামে। জীবিকার তাগিদে ভালুকা এমসির বাজার এলাকায় খুপরি ঘর ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ থাকেন। সংসারে হাল ধরার মত কেবল শামীমই। ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ফেসবুকে মঙ্গলবারের ওই ঘটনাটি পোস্ট দিলে তা ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, ঘটনার পরদিন বুধবার শামীম রিকশা নিয়ে সিডস্টোর বাসট্যান্ডে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে না চিনে শামীম জিজ্ঞেস করেন ‘কোথায় যাবেন’। চেয়ারম্যান তাকে জানান, তার গাড়ি আসবে। তিনি ভালুকায় যাবেন। এ সময় শামীমের আয় কেমন হয় তা জিজ্ঞেস করেন আবুল কালাম আজাদ। পরে কথা প্রসঙ্গে মঙ্গলবারের ঘটনাটি খুলে বলেন শামীম। পরে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
রিকশাচালক শামীম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সিডস্টোর থেকে দুইজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে ভালুকা মডেল থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে বাসট্যান্ড এলাকায় গেলে হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম আমাকে সিগন্যাল দেয়। তারা আমার রিকশা নিয়ে যেতে চান।
কাকুতিমিনতি করার পর ১ হাজার টাকা চান তারা। কিন্তু ওই রাতে আয়ের ৬০০ টাকা ও পকেটে থাকা ১০০ টাকা দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমি ওই দিন বাসায় খালি হাতে ফিরি।’ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশের পর হাইওয়ে ওসি তাকে ফোন করেছিলেন বলে জানান শামীম।
এ ব্যাপারে ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আমরা অনুসন্ধান করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে শামীমকে ফোন দিয়েছিলাম। কে নিয়েছে (টাকা) তা সে বলতে পারে না। আমরা দেখছি ওই রাতে কে ডিউটি করছে।’
ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রিকশাচালকের টাকা নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রয়াস। আগামী জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করব।